মৌলভীবাজার -১ (বড়লেখা-জুড়ী) সংসদীয় আসনে বিএনপি’র প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস…

দীর্ঘদিন থেকে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-
জুড়ী) সংসদীয় আসনে বিএনপি'র
প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে আসছেন
বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী এড
এবাদুর রহমান চৌধুরী। বড়লেখা-
জুড়ী বিএনপি'র রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য এই প্রবীন বিএনপি নেতার। সাবেক
অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের
ঘনিষ্টজন হওয়ায় বিগত বিএনপি সরকারের
আমলে হন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু
সম্প্রতি শেষ
হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে তার ভূমিকা এবং তত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের
আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে বড়লেখা-
জুড়ী বিএনপি'র নেতাকর্মীরা তার উপর
অসন্তুষ্ট। .সম্প্রতি বিএনপির গুলশান অফিস থেকে এক
গোপন জড়িপ চালানো হয়। জড়িপেই এবাদুরের
দুর্বলতাগুলো উঠে এসেছে আর
জড়িপে এগিয়ে গেছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ
মিঠু। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সহ
দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জড়িপের
বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন বিগত ৫
বছরের আন্দোলন সংগ্রামে এবাদুর রহমানের
কোন ভুমিকাই ছিল না। মাঠের
নেতাকর্মীরা তাকে খুজে পাননি বলে অভিযযোগ
এসেছে। সেই তুলনায় মিঠুর ভূমিকা ছিল জোরাল। কেন্দ্রীয় বিএনপি'র
নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি সুনজরে দেখছেন।
তিনি আরো বলেন বিগত
উপজেলা নির্বাচনে মিঠুর জয় নিশ্চিত
থাকার পরও আওয়ামীলীগের ইলেকশন
ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাছে পরাজিত হয়েছেন বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি অবগত আছেন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে তরুন ও ভাল সংগঠক
হিসেবে মিঠুর বিষয়টি কেন্দ্রের
বিবেচনায় রয়েছে। জুড়ী উপজেলার এক
প্রভাবশালী বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন
আহমেদ মিঠু। দীর্ঘ দিনের চেষ্টায়
জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক
দক্ষতা বৃদ্ধি করে এই ইউনিটকে বিএনপির
জন্য একটি মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের
আন্দোলনে জুড়ী উপজেলায় তার
ভূমিকা কেন্দ্রীয় বিএনপি'র
নীতি নির্ধারকদের নজর কেড়েছে।
জেলা সভাপতি এম নাসের রহমানের গুড বুকেও রয়েছেন মিঠু। মিঠুর নেতৃত্বে ঐ সময়
নির্বাচন ঠেকাতে ব্যাপক প্রতিরোধ
গড়ে তোলা হয় পুরো জুড়ী উপজেলায়। এর
পুরস্কার
হিসেবে মিঠুকে পরবর্তীতে জুড়ী উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্র
থেকে ঘোষনা করা হয়। ঐ নির্বাচনে মিঠু
পরাজিত হলেও দলীয় কর্মী সমর্থক ও
উপজেলা বাসী মনে করেন মিঠু হেরেছেন
আওয়ামীলীগের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর
কাছে। মিঠুর জয় নিশ্চিত ছিল। ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান নাসির
উদ্দিন আহমেদ মিঠু একজন বিশিষ্ট
ব্যবসায়ী, ঢাকাস্থ
ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ২
বারের সাধারন সম্পাদক এবং ঢাকাস্থ
মৌলভীবাজার জেলা সমিতির সাধারন সম্পাদক। এদিকে সম্প্রতি শেষ
হওয়া উপজেলা নির্বাচনে বড়লেখায় বিএনপির
প্রার্থী ছিলেন হাফিজ আহমেদ।
বড়লেখা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি হাফিজ
এবাদুরের অত্যন্ত কাছের মানুষ
হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি তিনি পক্ষ ত্যাগ করে মিঠুর
সাথে যোগ দিয়েছেন। এর কারন
অনুসন্ধানে জানা যায়
উপজেলা নির্বাচনে এবাদুরের
ভূমিকা নিয়ে হাফিজ তার উপর অত্যন্ত
ক্ষুদ্ধ। নির্বাচনী প্রচারনায় এবাদুরকে হাফিজের পক্ষে একদিনও
মাঠে দেখা যায়নি। মাঠে গুজব আসে জামাতের
সঙ্গে আতাত ও অর্থনৈতিক লেনদেনই নাকি এর
কারন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বড়লেখা বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ
করেন এবাদুর রহমানকে অনেক অনুরোধ, হাতে পায়ে ধরেও হাফিজের
পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায়
নামানো যায়নি। তিনি অসুস্থতার কারন
দেখিয়ে সবসময় এড়িয়ে গেছেন। এছাড়া বিগত
দিনের আন্দোলনে মাঠের নেতাদের কোন খোজ
রাখেন নি তিনি। বড়লেখা বিএনপির আরেক সাবেক সভাপতি দারাদ আহমেদও মিঠুর
সাথে রয়েছেন । আর এ সবকিছুই কেন্দ্রীয়
বিএনপি'র নজরে রয়েছে খোজ নিয়ে নিশ্চিত
হওয়া গেছে। হাফিজ আহমেদ এবাদুরের পক্ষ ত্যাগ করায়
বড়লেখা-জুড়ীর রাজনীতিতে এবাদুর
রহমানের অবস্থান এখন অনেকটাই দুর্বল।
তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায়
হাফিজই ছিলেন এবাদুরের ভরসা। হাফিজ
পক্ষ ত্যাগ করায় এবাদুর এখন তৃণমূল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বলা যায়। আর
বিগত ১/১১ এর সময় সংস্কারপন্থী ছিলেন
এবাদুর, তখনকার সময়ে মান্নান ভূইয়া,
কোরেশীদের সাথে সংস্কারের একজন
উদ্যোক্তা হয়ে দলের অনেক ক্ষতি করেছেন
তিনি। এই অভিযোগ এখনও বিএনপি'র ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার
বিরুদ্ধে করে থাকেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এক সময়ের
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি'র
দাপুটে নেতা এবাদুরের দুরত্ব
বেড়েছে জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে আর মিঠু
হয়েছেন জেলা নেতৃবৃন্দের আস্থাভাজন।
বর্তমানে জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান এবং সাঃ সম্পাদক বেগম খালেদা রাব্বানীর
অত্যন্ত আস্থাভাজন মিঠু। আগামী সংসদ নির্বাচন
কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা এটা অনেক বিচার
বিশ্লেষন ও প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়।
তবে বড়লেখা-জুড়ী বিএনপির
রাজনীতিতে পরিবর্তনের সুর অনেকটাই
স্পষ্ট।